গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল, অভিযোগ শীর্ষ ২ ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থার |


অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল পরিকল্পিত গণহত্যা চালাচ্ছে— এমন অভিযোগ এনেছে ইসরায়েলভিত্তিক শীর্ষ দুটি মানবাধিকার সংস্থা ‘বতসেলেম’ এবং ‘ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস’। সোমবার প্রকাশিত এক যৌথ প্রতিবেদনে সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযান শুধু নৃশংসই নয়, বরং সুস্পষ্টভাবে গণহত্যার বৈশিষ্ট্য বহন করে।


প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিনি পরিচয়ের কারণেই গাজার বেসামরিক নাগরিকরা ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছেন। এতে ফিলিস্তিনি সমাজে ভয়াবহ ও অনেক ক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ভাষায়, এই হামলা শুধুই কোনো সামরিক প্রতিক্রিয়া নয়— এটি একটি গোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে চালানো সুনির্দিষ্ট সহিংসতা।


২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ফিলিস্তিনি সংগঠন শুরু থেকেই এসব হামলাকে ‘গণহত্যা’ বলে উল্লেখ করে আসছিল। এবার নিজ দেশের প্রভাবশালী মানবাধিকার সংস্থাগুলোর এমন প্রতিবেদন প্রকাশে আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।


প্রতিবেদনে ইসরায়েলের অপরাধের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে— হাজার হাজার নারী, শিশু ও বৃদ্ধকে হত্যা; লাখ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা; খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা-সেবা থেকে বঞ্চিত রাখা। বোমা ও হামলায় ধ্বংস হয়েছে ঘরবাড়ি, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান— ফলে মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ফিলিস্তিনিরা।


বতসেলেমের নির্বাহী পরিচালক ইউলি নোভাক বলেন, আমরা যা দেখছি, তা খুব স্পষ্ট— একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করার জন্যই বেসামরিক জনগণের ওপর উদ্দেশ্যমূলক হামলা চালানো হচ্ছে। এখন সময়— প্রত্যেককে নিজেদের জিজ্ঞাসা করার, গণহত্যার মুখে দাঁড়িয়ে আপনি কী করবেন?


ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটসের প্রতিবেদনে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হওয়া স্বাস্থ্যব্যবস্থার দিকটি বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সংস্থাটির নিজস্ব দল বিস্তৃত তথ্য ও সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে দেখিয়েছে, কীভাবে হাসপাতাল, চিকিৎসাকেন্দ্র এবং চিকিৎসক-কর্মীদের টার্গেট করা হয়েছে। সংস্থাটির পরিচালক গায় শালেভ বলেন, জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশনের ২(সি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কেবল স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর এমন হামলাই একে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য যথেষ্ট।


প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েলের এই গণহত্যামূলক অভিযানে দেশটির পশ্চিমা মিত্র— বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহায়তা করছে। এই অবস্থাকে নৈতিক ও আইনি উভয় দিক থেকে দায়বদ্ধতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন দুই সংস্থার নেতারা।


গায় শালেভ বলেন, গণহত্যা রোধে শুধু নিন্দা জানানো যথেষ্ট নয়। এখন সময়— পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো যেন গণহত্যা কনভেনশনের অধীনে নিজেদের হাতে থাকা সব কৌশল ব্যবহার করে এটি থামাতে সক্রিয় ভূমিকা নেয়।


সূত্র : রয়টার্সদ্য গার্ডিয়ান


বিডি-প্রতিদিন/শআ





Source from Bangladesh Pratidin