আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে প্রশাসন। যাতে তারা জাতিকে শ্রেষ্ঠ গৌরবময় একটি নির্বাচন উপহার দিতে পারেন, সেই চেষ্টা থাকবে জনপ্রশাসনের। এ জন্য প্রশাসনের প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আবদুর রশীদ।
রবিবার (১০ আগস্ট) সন্ধ্যায় ঢাকার অফিসার্স ক্লাবে আয়োজিত ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে জাতীয় নির্বাচনে জনপ্রশাসনের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনাসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ডা. জাহেদ উর রহমান ও যুগান্তরের উপসম্পাদক বি এম জাহাঙ্গীর। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি এ বি এম আবদুস সাত্তার। আলোচনা সভায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. এ এস এম সালেহ আহমেদসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ক্লাবের সিনিয়র সদস্যরা। সভার শুরুতে জুলাই আন্দোলনের একটি সচিবত্র প্রতিবেদন দেখানো হয়।
সভাপতির বক্তব্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশীদ বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের আমরা ভুলে গেছি। আমরা সহজেই ভুলে যাই অনেক কিছু। এ দেশের মানুষ অনকে কিছুই ভুলে থাকতে চায়। ৯০ এর গণ-অভ্যুত্থানের অনেক কিছুই আমরা কাজে লাগাতে পারিনি।
বাংলাদেশের প্রশাসন একটি খারাপ সময়ের মধ্যে দিন পার করছে। চাইলেই সব কিছু হয় না। তারপরও সরকারের ঘোষনা অনুযায়ী আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার সর্বোচ্চ চেষ্ঠা করা হবে। জাতিকে একটি গৌরবময় নির্বাচন উপহার দিবে প্রশাসন। এ জন্য সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্য বিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি এ বি এম আবদুস সাত্তার বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে চারটি(১৯৭৯, ৯১, ৯৬, ২০০১) নির্বাচন ছাড়া বাকি ৮টি নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। বিশেষকরে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ এর নির্বাচনকে কেউ নির্বাচন বলে না। ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে এই তিনটি নির্বাচনে যারা জড়িত ছিল তাদের অনেকে এখনো প্রশাসনে কর্মরত আছেন। আমি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে অনুরোধ করবো আপনারা ফ্যাসিস্ট হাসিনার সুবিধাভোগী কর্মকর্তা যারা প্রশাসনকে কুলষিত করেছে, নষ্ট করেছে তাদের চাকরি থেকে বের করে দেবেন। তাদের আর প্রশাসনে চাকরি করার নৈতিক অধিকার নেই। তারা চাকরিতে থাকলে আগামী নির্বাচনে স্যাবোটাজ করতে পারে।
বাংলাদেশ এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএসএ) মহাসচিব ও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী বলেন, একটি চেতনা ধারণ করেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ঘটেছে। প্রশাসনের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। অস্বীকার করার কিছু নেই। আমাদের অনেক কর্মকাণ্ডও বির্তকিত আছে। আমাদের অনেক দায় আছে। আমাদের যারা পরিচালিত করেন তাদের কী কোনো দায় নেই? আমরা নিরপেক্ষভাবে কাজ করার সুযোগ চাই। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব মহলের সহযোগিতা চাই। সবার সহযোগিতা পেলে নিশ্চয় সুন্দর একটি নির্বাচন করা সম্ভব।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন অনুকূল পরিবেশ পেলে তারা ভাল কাজ করতে পারেন। সংবিধান ও চাকরি আচরণবিধি কী বলে? ২০১৮ সালের রাতের ভোট যেসব কর্মকর্তা করেছেন তাদের কী জোর করা হয়েছিল নাকি নিজেরাই এই অপকর্ম করেছেন। নিজস্ব স্বার্থে ঠিকই ঐক্যবদ্ধ হন কিন্তু আপনারা কী কখনো তেমনি এক হয়ে বলেছেন আমরা এই অন্যায় করবো না। আপনারা সংবিধান ও আইন মেনে কাজ করলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। ভারতে এ ধরনের কাজ করা সম্ভব না। কারণ সেখানকার প্রশাসন নিজেদের মেরুদণ্ড গড়ে তুলেছে। আমাদের প্রশাসনকেও শক্তিশালী অবস্থানে নিতে হবে।
যুগান্তরের উপ-সম্পাদক বি এম জাহাঙ্গীর বলেন, প্রশাসন ও গণমাধ্যম শক্তিশালী হলে রাতের ভোট সম্ভব হবে না। দুই হাজার সন্তানের রক্তের উপর দিয়ে প্রশাসনে বসে আপনাদের দলবাজ আমলা ও সাংবাদিকদের উৎখাত করতে হবে। অঙ্গীকার করতে হবে নিজেরা অপকর্ম করবো না কাউকে করতে দিবো না। প্রশাসনের কাছে আমার প্রশ্ন হলো ফ্যাসিস্ট আমলের দলবাজ ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তারা এখনো কিভাবে প্রশাসনে বহাল আছে। যারা সচিবালয়কে দলীয় কার্যালয় বানিয়ে রেখেছিল, তাদের কেন এখনো চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে না। সংস্কারের নামে তামাশা করছে প্রশাসন। আজকে একটি জাতীয় পত্রিকায় ফ্যাসিস্ট কর্মকর্তাদের সুনির্দিস্ট তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা দেখতে চাই তারা আরও কতদিন প্রশাসনে থাকে। তাদের বিচার করুন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল