নবীজি (সা.)-এর ১০টি অনন্য বৈশিষ্ট্য |


মুহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র জীবনে এমন সব গুণ ও বৈশিষ্ট্যের সমাবেশ ঘটেছে, একসঙ্গে এতগুলো গুণ ও বৈশিষ্ট্যের সমাহার আর কারও মাঝে পাওয়া যায় না। বিশ্ববাসীর জন্য উত্তম আদর্শ হিসেবে আল্লাহ তাঁকে মনোনীত করেছেন। আর এ কারণে তাঁকে অসংখ্য বিশেষ বৈশিষ্ট্য দান করেছেন, যেন আমরা সেগুলো থেকে জীবনপথের পাথেয় সংগ্রহ করতে পারি। আজ আমরা নবীজির উল্লেখযোগ্য ১০টি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করব। এক. সর্বোৎকৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী। নবীজি এমন চরিত্রের অধিকারী ছিলেন, তার চেয়ে উত্তম চরিত্রের আর কোনো মানুষ হতে পারে না। স্বয়ং আল্লাহ তাঁর চরিত্রের ব্যাপারে বলেছেন, নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী। (সুরা কলম)। শত্রুরা তাঁর ব্যাপারে নানা রকম অপপ্রচার চালিয়েছে। জাদুকর, পাগল, কবি, জিনগ্রস্ত ইত্যাদি অপবাদ দিয়েছে। কিন্তু তাঁর চরিত্র এতটাই পবিত্র ছিল, ঘোর শত্রুরাও অপপ্রচারের অংশ হিসেবেও কোনো দিন তাঁর চরিত্রের গায়ে কালিমা লেপন করতে পারেনি। দুই. সর্বোচ্চ জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। রসুল (সা.) ছিলেন সর্বাধিক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। পৃথিবীতে আরও বহু জনপ্রিয় ব্যক্তি এসেছে, সামনেও আসবে। কিন্তু তাদের জনপ্রিয়তা বিশেষ কোনো পরিমণ্ডলে, বিশেষ কোনো দেশে সীমাবদ্ধ থাকে। আবার মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে সব জনপ্রিয় ব্যক্তির জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে। কিন্তু রসুল (সা.) জীবদ্দশায়ও জনপ্রিয় ছিলেন, ইন্তেকালের প্রায় ১ হাজার ৫০০ বছর পরও পৃথিবীব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব তিনি। তিন. সর্বাধিক প্রশংসিত ব্যক্তিত্ব। তিনি পৃথিবীজুড়ে যে পরিমাণ প্রশংসিত, আর কোনো মানুষ তাঁর ধারেকাছেও অতটা প্রশংসিত নয়। তাঁর মুহাম্মদ নামটার অর্থই প্রশংসিত। তৎকালীন আরবে এই নামের কোনো প্রচলন ছিল না। দাদা আবদুল মোত্তালিব সমাজের প্রথা ভেঙে প্রিয় দৌহিত্রের জন্য এ নামটি নির্বাচন করেন। এটাও রসুল (সা.)-এর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। চার. বিশ্বস্ত ব্যক্তিত্ব। তাঁর মতো বিশ্বস্ত মানুষ পৃথিবীতে আর আসেনি, সামনেও আসবে না। বিশ্বস্ততার এই অনন্য গুণের কারণে কৈশোরেই তিনি আল-আমিন উপাধিতে সিক্ত হয়েছিলেন। তৎকালীন আরবে ডাকাতির কারণে সম্পদের নিরাপত্তা ছিল না। ফলে মক্কার অনেক মানুষ নবীজির কাছে সম্পদ গচ্ছিত রাখত। হিজরতের সময় রসুল (সা.) আলী (রা.)-কে মক্কায় রেখে যান এ উদ্দেশ্যে, তাঁর কাছে গচ্ছিত থাকা সম্পদ আলী যেন  পাওনাদারের কাছে পৌঁছে দেন। এটা এক অদ্ভুত ব্যাপার, যাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে রসুল (সা.) মক্কা ত্যাগ করছেন, সেই শত্রুদের আমানত তখনো তাঁর ঘরে গচ্ছিত এবং সেই আমানতের খেয়ানত যেন না হয় সে ব্যাপারে তিনি সর্বোচ্চ সতর্ক। পাঁচ. তিনি ছিলেন পুরো জগতের জন্য রহমত। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেছেন, আর আমি তো  আপনাকে বিশ্বজগতের জন্য রহমত হিসেবেই পাঠিয়েছি। (সুরা আম্বিয়া)। আমরা অনেকে মনে করি, রসুল (সা.) শুধু মানুষের জন্য রহমত ছিলেন। আসলে তা নয়। রসুল (সা.) গোটা সৃষ্টির জন্য রহমত ছিলেন। তিনি অকারণে গাছ কাটতে, আগুন দিয়ে প্রাণী হত্যা করতে, জবাইয়ের সময় পশুকে অহেতুক কষ্ট দিতে নিষেধ করেছেন। মানুষের মতো তিনি জীব-জগৎ ও প্রকৃতির জন্যও রহমত ছিলেন। ছয়. তিনি ছিলেন বিশ্বনবী। রসুল (সা.) মক্কায় জন্মগ্রহণ করলেও তিনি শুধু আরবের নবী ছিলেন না। তিনি ছিলেন পৃথিবীবাসীর নবী। আরবদের এ কথা বলার কোনো ক্ষমতা নেই যে মুহাম্মদ (সা.) শুধু আমাদের নবী। বরং আফ্রিকার গহিন জঙ্গলে বসবাসকারী কোনো মানুষও যদি ইমান আনে, তবে মুহাম্মদ (সা.) তারও নবী। সে-ও বুকভরে বলতে পারে, তিনি আমার রসুল। সাত. আল্লাহ কোরআনে বিভিন্ন নবীকে নাম ধরে সম্বোধন করেছেন। কখনো বলেছেন, হে আদম। কখনো বলেছেন, হে ইবরাহিম। কিন্তু কোথাও তিনি বলেননি, হে মুহাম্মদ। বরং যেখানেই মুহাম্মদ (সা.)-কে সম্বোধন করে কোনো কথা বলার প্রয়োজন হয়েছে, তিনি বলেছেন, হে নবী অথবা হে রসুল। কোথাও আবার আদুরে সম্বোধন করে বলেছেন, হে কম্বলাবৃত, হে বস্ত্রাবৃত। একজন মানুষ কতটা সম্মানিত হলে খোদ আল্লাহও তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন! আট. রসুল (সা.) ছিলেন সারসমৃদ্ধ কথার অধিকারী। অল্প কথায় তিনি গভীর মর্মসমৃদ্ধ বক্তব্য উপস্থাপন করতেন। উদাহরণস্বরূপ বিদায় হজের ভাষণের কথা বলা যায়। বিদায় হজের ভাষণ এতটাই সংক্ষিপ্ত, মুদ্রিত হলে এর জন্য এক পৃষ্ঠাই যথেষ্ট। অথচ সংক্ষিপ্ত এ ভাষণের মর্মার্থ সুবিস্তৃত। এর তাৎপর্য সুগভীর। নয়. হাউজে কাউসারের অধিকারী। পরকালের রসুল (সা.)-কে বিশেষ পুরস্কার হিসেবে হাউজে কাউসার দেওয়া হবে। আল্লাহ বলেছেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাকে কাউসার দান করেছি। (সুরা কাউসার)। এর উপহার আমাদের নবীর জন্য খাস। অন্য কোনো নবীকে এটা দেওয়া হবে না। দশ. তিনি শেষ নবী। তাঁর পরে পৃথিবীতে আর কোনো নবী আসবে না। এটাও রসুল (সা.)-এর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এখানে নবীজির অসংখ্য বৈশিষ্ট্যের ১০টি  নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা যদি উভয় জগতে সফল হতে চাই, তবে নবীজির আদর্শ ধারণ করার বিকল্প নেই।    


জুমার মিম্বর থেকে


গ্রন্থনা : সাব্বির জাদিদ


বিডি প্রতিদিন/এমআই

 





Source from Bangladesh Pratidin