বিশ্বজুড়ে হারিয়ে যাচ্ছে জলাভূমি, ২০৫০ সাল নাগাদ ক্ষতি হতে পারে ৩৯ ট্রিলিয়ন ডলার |


জলাভূমি আমাদের কৃষি, মাছ আহরণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে খুব দ্রুত এই জলাভূমি হারিয়ে যাচ্ছে। এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ না হলে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের মোট ৩৯ ট্রিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে বলে সতর্ক করেছে কনভেনশন অন ওয়েটল্যান্ডস (জলাভূমি বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি)।


মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭০ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের মোট ২২ শতাংশ জলাভূমি হারিয়ে গেছে। এর মধ্যে আছে মিঠা পানির জলাভূমি (যেমন—নদী, হ্রদ, পিটভূমি) এবং সামুদ্রিক উপকূলবর্তী জলাভূমি (যেমন—ম্যানগ্রোভ বন ও প্রবালপ্রাচীর)। এই হারানো জলাভূমির পরিমাণ প্রায় ৪১১ মিলিয়ন হেক্টর, যা ৫০ কোটিরও বেশি ফুটবল মাঠের সমান জায়গা।


প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জমির ব্যবহার পরিবর্তন, দুষণ, কৃষি সম্প্রসারণ, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টকারী বিদেশি উদ্ভিদ বা প্রাণীর আগমন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে (যেমন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও খরা) এই সংকট আরও গভীর হচ্ছে।


প্রতিবেদনের প্রধান লেখক হিউ রবার্টসন বলেন, জলাভূমি ধ্বংসের মাত্রা এত বেশি হয়ে গেছে যে, এটা আর উপেক্ষা করার সুযোগ নেই।


বিশ্বজুড়ে এখন যে জলাভূমি রয়ে গেছে, তার এক-চতুর্থাংশ ইতোমধ্যেই ভেঙে পড়ার পথে। এই অবস্থা থেকে ফিরে আসতে প্রতিবছর ২৭৫ থেকে ৫৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। তবে বর্তমানে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, তা একেবারেই অপ্রতুল।


জলাভূমির উপকারিতা অনেক—এগুলো বন্যা রোধে সাহায্য করে, পানিকে পরিশোধন করে ও বাতাসে থাকা অতিরিক্ত কার্বন ধরে রাখে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যখন ঘন ঘন ঝড়-বৃষ্টি ও জলস্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন এই জলাভূমিগুলো হয়ে উঠতে পারে বড় ভরসা। পাশাপাশি, এগুলো মাছ ধরা ও কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় এবং অনেক জায়গায় সংস্কৃতির অংশ হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ।


এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে জিম্বাবুয়ের ভিক্টোরিয়া ফলস শহরে হতে যাওয়া এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ঠিক এক সপ্তাহ আগে। সম্মেলনটি কনভেনশন অন ওয়েটল্যান্ডস এর অন্তর্ভুক্ত ১৭২টি দেশ—যার মধ্যে চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রও আছে—প্রতি তিন বছর পরপর একত্রিত হয়ে জলাভূমি রক্ষার বিষয়ে আলোচনা করে। তবে এবারের সম্মেলনে সব দেশ প্রতিনিধি পাঠাবে কি না, তা নিশ্চিত নয়।


প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে জলাভূমি ধ্বংসের হার সবচেয়ে বেশি, তবে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায়ও এই অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।


তবে আশার খবরও আছে। অনেক দেশ ইতোমধ্যে জলাভূমি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। যেমন— জাম্বিয়া, কম্বোডিয়া ও চীনে এখন পুনর্বাসন প্রকল্প চলছে।


বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল





Source from Bangladesh Pratidin