বৃদ্ধ বয়সেও সুস্থ থাকার চাবিকাঠি ফিজিওথেরাপি |


প্রতি বছর ৮ই সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস পালিত হয়। ২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য হলো, “সুস্থ বার্ধক্যে ফিজিওথেরাপি ও শারীরিক কার্যকলাপের ভূমিকা: দুর্বলতা ও পড়ে যাওয়া প্রতিরোধ।”


দিবসটির মূল লক্ষ্য জনগণকে ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করা, ফিজিওথেরাপিস্টদের অবদান তুলে ধরা এবং শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সুস্থতার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপির ইতিবাচক প্রভাব প্রচার করা। বার্ধক্য শুধুমাত্র জীবনের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নয়, বরং এটি শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনে।


সুস্থ বার্ধক্যের প্রয়োজনীয়তা


বয়স বাড়ার সঙ্গে শারীরিক শক্তি, পেশির কর্মক্ষমতা, হাড়ের ঘনত্ব ও ভারসাম্য কমে যায়। ফলে দেখা দেয়, 


  • পেশি দুর্বলতা: দৈনন্দিন কাজ করা কঠিন হয়।
  • হাড়ের ভঙ্গুরতা: পড়ে যাওয়া বা আঘাতের ঝুঁকি বাড়ে।
  • ভারসাম্য হ্রাস: হাঁটাচলার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ: আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন ও অন্যান্য ক্রনিক রোগ।


পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের ৩০%–৪০% প্রতিবছর অন্তত একবার পড়ে যান, যা গুরুতর আঘাত বা অক্ষমতার কারণ হতে পারে।


ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব


ফিজিওথেরাপি কেবল পুনর্বাসন নয়, এটি বৃদ্ধদের সক্রিয়, সুস্থ ও স্বনির্ভর জীবন নিশ্চিত করে।


প্রধান অবদানসমূহ


  • শক্তি ও ভারসাম্য বৃদ্ধি: পেশি শক্তি ও ভারসাম্য উন্নত।
  • পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমানো: ব্যায়াম ও ফিজিওথেরাপি পড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
  • হাড় ও জয়েন্টের স্বাস্থ্য রক্ষা: অস্টিওপরোসিস ও আর্থ্রাইটিস নিয়ন্ত্রণ।
  • দৈনন্দিন কাজের স্বনির্ভরতা: ঘর, বাজার, সিঁড়ি সহজভাবে করা সম্ভব।
  • মানসিক ও সামাজিক সুস্থতা: স্ট্রেস কমায়, ডিপ্রেশন প্রতিরোধ।
  • দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সুবিধা: হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য ক্রনিক রোগের ঝুঁকি কমায়।


শারীরিক কার্যকলাপের গুরুত্ব


  • বৃদ্ধ বয়সে শারীরিক কার্যকলাপ শারীরিক সক্ষমতা, মানসিক সুস্থতা ও সামাজিক অংশগ্রহণ বজায় রাখে।
  • হালকা হাঁটা বা জগিং
  • ভারসাম্য ও পেশি শক্তি বৃদ্ধি ব্যায়াম
  • স্ট্রেচিং ও ফ্লেক্সিবিলিটি অনুশীলন
  • হালকা যোগব্যায়াম বা শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম
  • ফিজিওথেরাপিস্টের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যায়ামের পরিকল্পনা নেওয়া ফলপ্রসূ।


প্রতিরোধের মূলনীতি


  • নিয়মিত ব্যায়াম
  • সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য
  • পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম
  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
  • ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম


সামাজিক ও পারিবারিক প্রভাব


প্রবীণরা সমাজের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের বাহক। ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে সক্রিয় রাখলে তারা পরিবার ও সমাজে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।


চ্যালেঞ্জ ও সমাধান


অনেক দেশে প্রবীণ জনগোষ্ঠী পর্যাপ্ত ফিজিওথেরাপি সেবা পান না। সমাধানের জন্য—


  • সচেতনতা বৃদ্ধি
  • প্রশিক্ষিত ফিজিওথেরাপিস্ট সংখ্যা বৃদ্ধি
  • কমিউনিটি পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও শারীরিক কার্যক্রম


ফিজিওথেরাপি ও নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ বৃদ্ধ বয়সেও সক্রিয়, স্বনির্ভর ও সুস্থ জীবন নিশ্চিত করে। এটি শারীরিক সক্ষমতা, মানসিক সুস্থতা ও সামাজিক অংশগ্রহণ বজায় রাখে।


লেখক

ডা: এম ইয়াছিন আলী

চেয়ারম্যান ও চীফ কনসালটেন্ট

ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল

ধানমন্ডি, ঢাকা ।


বিডি প্রতিদিন/আশিক





Source from Bangladesh Pratidin