অব্যাহত ভারী বর্ষণে সেন্টমার্টিন দ্বীপসহ কক্সবাজারের টেকনাফের অন্তত ৫০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের ৩ হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
পানিতে তলিয়ে গেছে সেন্টমার্টিন, হ্নীলা, সাবরাং, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা।
কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হলেও সোমবার (৭ জুলাই) সকাল থেকে বৃষ্টির মাত্রা বেড়ে গিয়েছে। ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষের ঘরবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। দুর্ভোগে পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। মানুষের ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। সোমবার সকাল থেকে অনেক পরিবার চুলোয় আগুন জ্বালাতে পারেনি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন জানান, টানা বৃষ্টির প্রভাবে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অনেক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পানিবন্দী পরিবারগুলোর মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরতদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে মাইকিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি পৌরসভার আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের তিনবেলা খাবার প্রদান করা হচ্ছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান জানিয়েছেন, সোমবার সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কক্সবাজারে ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সেন্টমার্টিন বাজার কমিটির সভাপতি হাবিব খান জানিয়েছেন, সাগর উত্তাল ও জোয়ারের কারণে দ্বীপের কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকে পড়ছে। এছাড়া টানা বৃষ্টিতে দ্বীপের ভেতরের রাস্তা বা বিভিন্ন জায়গা থেকে দ্রুত নেমে যাওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।
টেকনাফ পৌরসভা সংলগ্ন কলেজ পাড়ার অধিকাংশ বসতবাড়ি, শীলবনিয়া পাড়া, ডেইলপাড়া, জালিয়াপাড়া, অলিয়াবাদ, খানকারডেইল, চৌধুরীপাড়া, কেকে পাড়ার প্রায় অংশ পানিতে ডুবে গেছে। এছাড়া টেকনাফ সরকারি কলেজ, আইডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পুরো প্রাঙ্গণ পানিতে নিমজ্জিত।
হ্নীলা ইউনিয়নের রঙিখালী, ওয়াব্রাং, মৌলভীবাজার, ফুলের ডেল হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাং খালী, লম্বা বিল,কানজর পাড়া, মিনা বাজার, ওয়াব্রাং এর ঘর বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বশির আহমেদ বলেন, ভারী বৃষ্টিতে অনেক বাড়ি ঘরে পানি ঢুকে বাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। জনসাধারণের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। মূলত কিছু দুষ্কৃতকারী কর্তৃক খাল দখলের পাশাপাশি ড্রেন পরিষ্কার না থাকায় এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এসব দীর্ঘস্থায়ী হলে মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে।
সাবরাং উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান বলেন, এভাবে একটানা বৃষ্টি খুব কম সময়ে দেখা গেছে। চারদিকে পানি থৈ থৈ করছে। অধিকাংশ বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। খাওয়া-দাওয়া, ঘুমের কষ্ট তো আছেই, প্রাকৃতিক কার্য সম্পাদন করতে চরম বেগ পেতে হচ্ছে। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জনজীবন অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছে।
সাবরাং ইউনিয়নের কুরাবুইজ্জা পাড়া, ফতেহলিয়া পাড়া, মুন্ডার ডেইল, চান্দলী পাড়ার একাংশ, হাদুর ছড়া, খুরের মুখের অধিকাংশ বসতবাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। এছাড়া ওই ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ মাঝের পাড়া, হাজীর পাড়া ও দক্ষিণ পাড়ার দেড় শতাধিক পরিবার পানিতে ডুবে গেছে। উত্তর পাড়ার মাঝের ডেইল, ডাঙ্গর পাড়ার পূর্ব পাশ, কোনার পাড়ার পশ্চিম পাশের শতাধিক পরিবার চরম বিপাকে পড়েছেন। এছাড়া ক্যাম্প পাড়া, বাজার পাড়ার শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ছৈয়দ আলম বলেন, পূর্ব রঙ্গীখালী এলাকায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৩০০টি পরিবার দীর্ঘ সময় পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করেন। প্রতি বছর বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে এই এলাকায় জীবন-জীবিকা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাভাবিক চলাচল চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল