পানিতে গলে যাওয়া স্মার্ট মেমোরি চিপ বানালেন কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা |


ইলেকট্রনিক বর্জ্য (ই-ওয়েস্ট) বিশ্বব্যাপী এক বড় পরিবেশগত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন এমন এক বিশেষ ধরনের স্মার্ট মেমোরি ডিভাইস, যা নির্দিষ্ট সময়ে পানিতে গলে যায়।


দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়া ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির বিজ্ঞানীরা এটি তৈরি করেছেন। তাদের দাবি, এই ডিভাইসটি শুধু তথ্য সংরক্ষণে সক্ষম নয়, এটি সম্পূর্ণভাবে পরিবেশবান্ধবও।


বিজ্ঞানীরা ‘পিসিএল-টেম্পো’ (PCL-TEMPO) নামের এক নতুন ধরনের যৌগ ব্যবহার করেছেন, যা দুইটি উপাদানে গঠিত। এর একটি হলো TEMPO—এক ধরনের অর্গানিক (জৈব) অণু, যা বিদ্যুৎচালিত তথ্য সংরক্ষণে সক্ষম। অন্যটি হলো পলিক্যাপ্রোল্যাকটন (PCL)—একটি সহজে পচনশীল প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থ। এই নতুন ডিজাইনে মেমোরি সংরক্ষণ ও স্বাভাবিক উপায়ে ক্ষয় হয়ে যাওয়ার দুটি বৈশিষ্ট্যই রয়েছে।


এই প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. সাংহো চো বলেন, এটা প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। কারণ এই প্রথমবারের মতো আমরা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কোনো জৈব মেমোরি ডিভাইসে স্বতঃবিনষ্ট হওয়ার ক্ষমতা একত্রে প্রয়োগ করতে পেরেছি।


ড. সাংহো আরও জানান, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তিকে আরও আধুনিক করে ‘স্মার্ট ও অস্থায়ী ইলেকট্রনিক ডিভাইস’-এ রূপান্তর করা হবে, যার মধ্যে থাকবে নিজে নিজে মেরামতের ক্ষমতা ও আলোতে প্রতিক্রিয়া দেখানোর ক্ষমতা। এর মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব ও বায়োইলেকট্রনিক ডিভাইসের বানিজ্যিক ব্যবহার শুরু করা সহজ হবে।


ডিভাইসটি পরীক্ষায় প্রমাণ করেছে, এটি এক মিলিয়নের বেশি বার চালু (On) ও বন্ধ (Off) অবস্থার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে এবং ১০ হাজার সেকেন্ডের বেশি সময় ধরে তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে। এছাড়া ২৫০ বারেরও বেশি লেখালেখি ও মুছে ফেলার (write-erase) পরেও এর গুণমান নষ্ট হয়নি। এমনকি ৩,০০০ বার বাঁকানো হলেও এতে কোনো ক্ষতি হয়নি—যা একটি জৈব মেমোরি ডিভাইসের জন্য বিরল দৃষ্টান্ত।


এই স্মার্ট মেমোরি চিপ মানব দেহেও প্রতিস্থাপন করা যায়। বিজ্ঞানীরা এমনভাবে এর গঠন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন যাতে এটি প্রয়োজন অনুযায়ী গলে যায়। যখন বাইরের স্তর গলে যায়, তখন পুরো ডিভাইসটি পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সম্পূর্ণভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়, কোনোরকম আবর্জনা বা বিষাক্ত পদার্থ না রেখে।


উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, চলতি মাসেই জাপানের বিজ্ঞানীরা সাগরের পানিতে গলে যাওয়া এক ধরনের প্লাস্টিক আবিষ্কারের খবর দেন। সে প্লাস্টিকও পরিবেশবান্ধব এবং মাটিতে উপকারী উপাদান—নাইট্রোজেন ও ফসফরাস—ফেলে যায়। এই দুটি আবিষ্কার প্রযুক্তি ও পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।


বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল





Source from Bangladesh Pratidin