কেন প্রাণ নেই মঙ্গলে? নতুন তথ্য নাসার |


মঙ্গল গ্রহ ঘিরে মানুষের কৌতূহল দিন দিন বেড়েই চলেছে। লাল এই গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব না থাকলেও ভবিষ্যতে কীভাবে সেখানে মানুষকে বসবাসের সুযোগ করে দেওয়া যায়—তা নিয়ে চলছে নানা গবেষণা। এরইমধ্যে, অতীতে মঙ্গলে নদী, হ্রদ ও এমনকি সমুদ্র থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু এত কিছু থাকা সত্ত্বেও মঙ্গলে কোনো প্রাণ নেই কেন? নাসার রোভার কিউরিওসিটি এই প্রশ্নের একটি সম্ভাব্য উত্তর খুঁজে পেয়েছে।


সম্প্রতি ‘নেচার’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যদি প্রমাণ মেলে কখনোই প্রাণ জন্ম নেয়নি মঙ্গলে, তাহলে বোঝা যাবে, মহাবিশ্বে প্রাণ সৃষ্টির প্রক্রিয়া বেশ কঠিন এবং বিরল। আর যদি কোনো প্রাচীন জীবনের চিহ্ন পাওয়া যায়, তাহলে বুঝতে হবে, মোটেও অসম্ভব নয় গ্রহ পর্যায়ে প্রাণ সৃষ্টি।


বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি মঙ্গলে খুঁজে পাওয়া কিছু শিলা নিয়ে গবেষণা করে দেখতে পান, সেখানে রয়েছে কার্বনেট খনিজ। এ খনিজ পৃথিবীতেও পাওয়া যায় এবং এটি বাতাসের কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে শিলার মধ্যে আটকে রাখে। পৃথিবীতে এই প্রক্রিয়াটি আবহাওয়া ও জলবায়ু ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু এই প্রক্রিয়া কার্যকরভাবে কাজ করেনি মঙ্গলে।


নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, পানি না থাকায় মঙ্গলে প্রাণ গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ দীর্ঘ মেয়াদে টেকেনি। মঙ্গলে নদী-হ্রদ থাকলেও তা ছিল খুবই স্বল্প সময়ের জন্য। এরপর পুরো গ্রহ মরুভূমিতে রূপ নেয়। গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক ও শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহবিজ্ঞানী এডউইন কাইট মনে করছেন, মঙ্গলে কিছু নির্দিষ্ট সময় ও স্থানে অল্প সময়ের জন্য প্রাণের উপযোগী পরিবেশ ছিল তবে তা ব্যতিক্রম, নিয়ম নয়। তরল পানি ক্ষণিকের জন্য ছিল, তারপর গ্রহটি হয়ে ওঠে শুষ্ক ও নিষ্প্রাণ প্রায় ১০ কোটি বছর ধরে।


পৃথিবীতে আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত গ্যাস কার্বনের পুনর্ব্যবহার করে জলবায়ু ভারসাম্য বজায় রাখে। কিন্তু মঙ্গলে আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তা কম হওয়ায় এই প্রাকৃতিক চক্রটি বাধাগ্রস্ত হয় এবং কার্বন আটকে পড়ে শিলায়, ফলে গ্রহের তাপমাত্রা নেমে যায় এবং শুষ্ক হয়ে পড়ে পরিবেশ। বিজ্ঞানীরা আশাবাদী, মঙ্গলের গভীরে কোথাও লুকিয়ে থাকতে পারে তরল পানি। ২০২১ সালে নাসার পারসিভিয়ারেন্স রোভার মঙ্গলের এক প্রাচীন নদীর মোহনায় অবতরণ করে এবং সেখানে কার্বনেটের চিহ্ন খুঁজে পায়। এটি প্রমাণ করে, কোনো একসময় কিছুটা সময়ের জন্য হলেও বসবাস যোগ্য ছিল মঙ্গল। এসব খনিজ ও শিলার বিশদ বিশ্লেষণের জন্য বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন, সেগুলো পৃথিবীতে এনে গবেষণা করতে। এ লক্ষ্যে আগামী এক দশকের মধ্যে মঙ্গল থেকে শিলা আনার প্রতিযোগিতায় নেমেছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। যদিও গবেষকেরা এটাও বলছেন যে—মঙ্গলের কার্বন চক্র ছিল ভারসাম্যহীন। সেখানে যতটা কার্বন পাথরে জমা হয়েছে, ততটা বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসেনি। আর এই ভারসাম্যহীনতাই হয়তো মঙ্গলের আজকের নিষ্প্রাণ চেহারার অন্যতম কারণ।


বিডি প্রতিদিন/এএম

 





Source from Bangladesh Pratidin